বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচ রেলপথ

একবিংশ শতাব্দীতে যোগাযোগ ব্যাবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। তবে যোগাযোগের অন্যতম ও প্রাচীন মাধ্যম রেলওয়ে সেই উনিশ শতক থেকেই অদ্য অব্দি বেশ জনপ্রিয় ও আরামদায়ক একটি যানবাহন। তবে বেশ অনেকটাই নিরাপদ এই রেল যোগাযোগ ব্যাবস্থাও দূর্ঘটনার সম্মুখীন হয়।পৃথিবীতে এমন অনেক ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথ রয়েছে যা মানুষকে ভয়ে শিহরিত করে তোলে।চলুন পৃথিবীর  সেসব দূর্গম কয়েকটি রেলপথ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

পৃথিবীর সবচেয়ে বিপদজনক রেলওেয়ের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় অবস্থিত ‘ হোয়াইট পাস এ্যান্ড ইউকন রুট অন্যতম। ১৭৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই ট্রেন আমেরিকা থেকে কানাডা যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এই ট্রেন আলাস্কার অনেক ভয়ানক জায়গা দিয়ে চলাচল করে। ১৮৮৯ সালে সোনার খনি খোজার জন্য এই রেলপথ বানানো হয়। এই রেলওয়ের অনেক অংশ কাঠের বানানো। তবে এই রেলপথ বিপদজনক হওয়ার অন্যতম কারণ একদিকে গভীর খাদ ও অন্য দিকে পাহাড়। এখানে ট্রেন অনেক সময় ছোট ছোট টানেল  ও উঁচু ব্রিজ দিয়ে যেতে হয়। অনেক ব্রিজের উচ্চতা ৩ হাজারে ফুটেরও বেশি হয়।লোকজন যখন এত উঁচু দিয়ে যাত্রা করার ফলে ভয়ে  জড়োসড়ো হয়ে যান। শীতের সময় চলাচল আরও দুষ্কর হয়ে পড়ে।বরফের শীতল বাতাস আর অন্ধকার টানেলে চলাচল আরও বিপদজনক করে তুলে।এতকিছুর পরেও যদি আপনার ভয় না লাগে তাতলে আপনি একজন রোমাঞ্চকর  মানুষ তা বলা যেতেই পারে।

সুইজারল্যান্ডের পাহাড়ের বুকে এই ট্রেন চলাচল দেখতে মনোমুগ্ধকর লাগে এবং এর সৌন্দর্য কতটা তা বুঝা যায় ।  ইউনেস্কো ওয়াল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে এটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে।এটি পাহাড়ে ঘেরা গাছপালা আর বরফে ঢাকার জন্য পৃথিবীতে এক টুকরো স্বর্গ বলে মনে হয়।আলবুলা ট্রেনের আকর্ষণ হলো ল্যান্ড ওয়াসার পুল। মাটি থেকে ২১৩ ফুট  উঁচু এই পুলকে সৌন্দর্যের আধার বলা হয়ে থাকে।রঙ -বেরঙের  স্থান দিয়ে আাসার পথে যখন এই পুলে এসে দাড়ায় তখন মনে হয় ফ্যান্টাসি ফিল্মের কোনো চরিত্র। এত উঁচু দিয়ে যাত্রা করা আপনার ভয়ের মাপকাঠি গুনবে। জীবনে একবার হলেও এই ট্রেনে ভ্রমন করা উচিত।

মায়ানমার দেশে রোমাঞ্চকর স্থান দেখার জন্য মায়ানমার ট্রেন সবচেয়ে উপযোগী।মায়ানমার ট্রেন দিয়ে মান্ডালা শহর থেকেহেসকো হিল সফরে অনেক রোমাঞ্চকর মোড় আর দৃশ্য দেখা যাবে। জমিন থেকে ৩৩৫ ফুট উঁচু এই ব্রিজ ১৯০০ সালে বানানো হয়। প্রায় ১১৮ সাল পুরনো এই ব্রিজ দিয়ে যখন ট্রেন অল্প  গতিতে যায় যাত্রীদের শ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হয়। রোমাঞ্চকর এই স্থান যাত্রীরা ফোনে রেকর্ড করতে ভুলেন নাহ। বয়ে যাওয়া বাতাস, টনটন ট্রেনের শব্দ আর ভয়ানক উঁচু মানুষকে অন্যরকম এক রোমাঞ্চকর জগতে নিয়ে যায়। আর এর ফলে মানুষ জন এখানে ঘুরতে আসে।

যেকোনো ট্রেন কে তার সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে তার পাটারিয়া। কিন্তু পীট ট্রেন নামক জার্মানির ট্রেনের মঞ্জিল পর্যন্ত পৌছানো অনেক কঠিন ও ভয়ানক হয়।এর কারণ হলো এর আঁকাবাঁকা পাটারি। আঁকাবাঁকা পাটারি হওয়ার জন্য যখন এর উপর দিয়ে ট্রেন চলাচল করে মনে হয় যেনো ট্রেন নৃত্য  করছে।এই ট্রেনের চলাচলের সবসময় মনে হয় যেনো ট্রেন পাটারি থেকে পড়ে যাবে।এই কারণে অনেক জায়গায় এর গতি অনেক কমে দেওয়া হয়। এই ট্রেন যাতায়াতের জন্য নয়। সুরঙ্গ আর কনস্ট্রাকশন এর জন্য এটি নির্মাণ করা হয়েছে। এটি ক্ষণস্থায়ী রেলওয়ে। খুব সহজে এটি বানানো যায়। এই ট্রেনের মাধ্যমে  ইঞ্জিন কম লাগে। আর যেকোনো কনস্ট্রাকশনে কম খরচ পড়ে।

এই ট্রেনকে ডেভিলস নোজ কেনো বলা হয় তা এখানে সফর করার সময় বুঝা যায়। ইকুয়েডরের আন্দিজ পর্বত দিয়ে বয়ে যাওয়া এই রেলপথের নাম হলো ‘নরিজ দল ডায়াবলো’। এই জায়গার একটি পাহাড়ের আকৃতি মানুষের নাকের মতো।এটিকে শয়তানের নাক বা ডেভিলস নোজ ডায়াবলো বলা হয়।  এই রেলপথ মূলত তার জিগজ্যাগ ও আঁকাবাকা রুটের জন্য পরিচিত। পাহাড় কেটে এই রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে এই জন্য একদিকে আন্দিজ পর্বতের উঁচু দেয়াল ও অন্য দিকে সুগভীর খাদ।সমুদ্রপৃষ্ঠ   থেকে  নয় হাজার ফুট উচ্চতায় প্রতিটি মোড় বিপদজনক। তাই এই রেলপথের চালককে অভিজ্ঞ হতে হয়।খুব রোমাঞ্চকর প্রিয় মানুষ এখানে কাজ করতে পারে। ১৮৯৯ সালে  নির্মাণকাজ শুরু হওয়া এই রেলপথের শিখরের উচ্চতা ১১ হাজার ৮৪১ ফুট। এখানে অনেক দূর্ঘটনা ঘটেছে। সাময়িক ভাবে অনেক বার বন্ধ করা হয়েছে। এটি নির্মান কালে অনেক শ্রমিকের প্রানহানি ঘটে।ট্রেনটি মোড় নেওয়ার সময় আপনার ভয় লাগবে না এমনটা হতেই পারে না।পাটারি থেকে ট্রেন সরে গেলে অন্তিম সৎকারের জন্য আপনার হাড়ও পাওয়া যাবে না।

সর্বশেষ নিবন্ধ

ফেসবুকে সারথি

শেয়ার করুন